সাল ২০২৩ নভেম্বরে ওপেনএআইর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যানকে বহিষ্কার করে পরিচালনা পর্ষদ। ওপেনএআই গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরে ব্যবসায়িক অংশটি দৃশ্যমান হয়, যা নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের মধ্যকার দ্বন্দ্বই প্রধান কারণ। যা-ই হোক, কয়েক দিনের বহিষ্কার নাটকের পর স্যাম আবার প্রতিষ্ঠানে সপদে বহাল হন। এবার তাঁর কোনো বিরুদ্ধ পক্ষও নেই।
অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে জিপিটি-ফাইভ আত্মপ্রকাশ করেনি। ২০২৪ সালে তা প্রকাশ হতে পারে। প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সিকি চেনের দাবি ছিল, জিপিটি-ফাইভ বছরের শেষ নাগাদ আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (এজিআই) ক্ষমতা অর্জন করবে; যা এআই খাতে আলোড়ন সৃষ্টি করবে। এজিআই হলো এআই প্রযুক্তির জন্য যে কোনো মানুষের মতো কাজ শেখার ক্ষমতা, বিষয়ভিত্তিক এআই জ্ঞানের সঙ্গে এটাই মূল বৈপরীত্য। সফল হলে জিপিটি-ফাইভ মানুষের মতোই কাজ করতে পারবে, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারবে, যা ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। যেমন মানুষের মতো বট ও সামাজিক মিডিয়ায় তথ্য-বিভ্রাট ঘটাতে পারে।
মাইক্রোসফট ও চ্যাটজিপিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলস নিয়ে উন্মাদনা সৃষ্টি করে। তারপর শুধুই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। বিশ্বসেরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান (এআই) নিয়ে কাজ করছে দিনরাত। তাবৎ প্রযুক্তি বিশ্বে নিত্যনতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। ঠিক তেমনিই ভবিষ্যতের শঙ্কাও ভাবাচ্ছে।
বছরের শুরুতে চ্যাটজিপিটির উত্থান গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। জিমেইলের অন্যতম নির্মাতা পল বুচেইট নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বলেন, চ্যাটজিপিটির মতো কথোপকথনমূলক এআইর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে গুগল তার ব্যবসায় গুটিয়ে যেতে পারে। আর তা সময় লাগবে বড়জোর দুই বছর। অবশ্য সময়ই তার সত্যতা বলে দেবে।
যদিও কম্পিউটার গেমসের জন্য উচ্চ মানের গ্রাফিকস চিপসেট তৈরির জন্যই মূলত প্রযুক্তিপ্রেমীরা চেনেন এনভিডিয়াকে। কিন্তু তাদের পণ্যই এখন উন্নত এআই প্রযুক্তির চালিকাশক্তি। এনভিডিয়া এআই হার্ডওয়্যারের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। দিন দিন এআই প্রযুক্তির চাহিদা বাড়ছে। ভবিষ্যতে যা আরও বাড়বে। এআই সিস্টেমে ব্যবহৃত কম্পিউটার চিপসের বাজারে আধিপত্য করে এনভিডিয়া। উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগে কোম্পানির আয়ও বাড়বে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বহুলাংশে ঝুঁকিমুক্ত। ফলে এনভিডিয়া বিশ্বের এমন ষষ্ঠ প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে, যার মূল্য ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
১৬ হাজারের বেশি সুপারচিপ ও ক্লাউডভিত্তিক এআই সুপারকম্পিউটার তৈরি করছে দুই প্রতিষ্ঠান। সুপারকম্পিউটার এনভিডিয়ার জেনারেটিভ এআই গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা হবে।
সব ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীর পর থেকে দৃশ্যমান হয় গুগল এআই টুলস জেমিনির আবির্ভাব। বিশ্বের বেশির ভাগ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি শুধু এক ধরনের কনটেন্ট বুঝতে বা তৈরি করতে পারে। জেমিনির বিষয়টি ভিন্ন। টেক্সটের সঙ্গে নানা ধরনের কনটেন্ট বুঝতে পারে এটি। গুগল ডিপমাইন্ডের কারিগরি রিপোর্টে জানা গেছে, জেমিনি আলট্রা চ্যাটজিপিটি-ফোর ছাড়াও অন্য এআই সব মডেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা ও উন্নয়নের ৩২টি মানদণ্ডের ৩০টিতেই হারিয়ে দিয়েছে। যার মধ্যে কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা থেকে শুরু করে নৈতিকতা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, আইনের মতো নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে ছবি বিশ্লেষণের ৯টি, ভিডিওচিত্র বোঝার ৬টি, ৫টি অডিও ও অনুবাদবিষয়ক মানদণ্ড ছাড়াও ১০টি টেক্সট ও যৌক্তিকতা বোঝার মানদণ্ডে সফলভাবে উতরে গেছে গুগল উদ্ভাবিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সব মডেল। অন্যদিকে টেক্সট ও যৌক্তিকতা বোঝার দুটি পরীক্ষায় অবশ্য জিপিটি-৪ সংস্করণের কাছে হেরেছে জেমিনি আলট্রা।
ওপেনএআইর চ্যাটজিপিটি প্রশ্নের ক্ষেত্রে কথোপকথনে প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। তবে এটিই সব না। অদূর ভবিষ্যতে জিপিটি-৪, জিপিটি-৪ টার্বো এবং জিপিটি-৪ ভিশন সংস্করণ আসবে; যা জটিল থেকে জটিলতর সমস্যার সমাধান করবে নিমেষে। তবে চ্যাটজিপিটি সবকিছুই করতে পারে, তা কিন্তু নয়; যা পারে না তা হচ্ছে নতুন কৌতুক লেখা। জরিপ সূত্র বলছে, চ্যাটজিপিটি মাত্র ২৫টি কৌতুক জানে; যা বলে তা ভাঙা রেকর্ডের মতোই শোনায়।