দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার অংশ হিসেবে ২৩ ডিসেম্বর ছয় জেলায় আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপির ‘আগুন রাজনীতির’ সমালোচনা করে দলটির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, কার জন্য নাচেন? পাপের ভাগিদার আপনারাই হচ্ছেন?
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন প্রান্ত থেকে খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও সাতক্ষীরা, বরিশাল বিভাগের বরগুনা, ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি জেলার নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
দেশের উন্নয়নের ধারা তখনই অব্যাহত থাকবে, যখন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার পছন্দের প্রার্থী বেছে নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে।’
নির্বাচন ঠেকানোর জন্য ২০১৩ সালের মতো বিএনপি আবারও অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, অভিযোগ করে তিনি বলেন, বাসে ঘুমিয়ে আছে হেলপার, তাকে পুড়িয়ে দিলো। রেলে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা… একটা মা তার শিশুকে বুকে নিয়ে বসে আছে, সে মা-শিশু পুড়ে কয়লা হয়ে গেলো। কোনো মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকলে, সে এই ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে না।’
বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে না দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিএনপি আর জামায়াতের হাতে কখনো এ দেশ নিরাপদ না। কারণ, তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কারণেই ঢাকা থেকে ছয়টি জেলার জনসভায় ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে মতবিনিময় করা সম্ভব হয়েছে, উল্লেখ করে গত ১৫ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমাও তুলে ধরে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বাবা-মাসহ সব হারিয়ে ফিরে এসেছিলাম এ দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করতে, দেশ উন্নত করতে। ঘোষণা দিয়েছিলাম, এ দেশের মানুষই আমাদের পরিবার। তাদের জন্যই আমি নিজেকে উৎসর্গ করেছি।
এ সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বাংলাদেশ বিক্রি করে, দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে হবে, সেই রাজনীতি আমি করি না। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। এ দেশের মানুষের জন্যই আমার রাজনীতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান যেভাবে হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, ঠিক একইভাবে বিএনপির চরিত্র ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত। অত্যাচার-নির্যাতনে এখনো অনেক নেতাকর্মী বয়ে বেড়াচ্ছে।
নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘সামনে ইলেকশন। এই ইলেকশন আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ, আমরা চাই, জনগণ অংশগ্রহণ করুক, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিক।
‘সবাই জনগণের কাছে যাবেন। জনগণ যাকে ভোট দেবে, সে নির্বাচিত হবে। আমি চাই, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক এবং জনগণের যে ভোটাধিকার, সেটি তারা প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে যে দেশের উন্নতি হয়, সেটার প্রমাণ আমরা দিয়েছি।’
জনসভায় তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতা কে, সেটাই প্রশ্ন। দুটোই তো সাজাপ্রাপ্ত। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ ও বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এরপরও তার ভাই-বোন এসেছিল আমার কাছে, মানবিকতার জন্য তাকে বাসায় থাকতে দিয়েছি। আর তারেক জিয়া, যারা আমাকে গ্রেনেড হামলা করে মারতে চেয়েছিল, গুলি করেছে, হামলা করেছে; তারপরও আমরা এই মানবিকতা দেখিয়েছি। তার (খালেদা জিয়া) ছেলে হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতির আখড়া আর সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। এর পর ২০০৭ সালে আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে নাকে খত দিয়ে বিদেশ গিয়ে এখন সেখান থেকে হুকুম দিচ্ছে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার।’
‘বিএনপির যারা নেতাকর্মী আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়… আমি বলব, যারা পোড়াচ্ছেন, পাপের ভাগিদার আপনারাই হবেন। তারেকের কিছুই হবে না। ও তো ওখানে জুয়া খেলে ভালো আছে। আপনাদের হুকুম দিচ্ছে আর আপনারা নাচেন। কার জন্য নাচেন? ও তো দেশেই আসে না। মা মরে মরে, তাকে দেখতেও তো আসে না। এত সাহস থাকলে একবার দেশে এসে দেখুক না। এ দেশের মানুষ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবেই।’
বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল অভিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা আগুন দিয়ে পোড়ায়… বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল না, এটা একটা সন্ত্রাসী দল। জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল। এই সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধীদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। তাহলে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।’