ইমাম গাজালী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, সংকল্পের ভিত্তিতে তওবাকরীদের কয়েকটি শ্রেণী ভাগ করেছেন। এখানে তওবাকারীদের শ্রেণীভাগ তুলে ধরা হলো-
প্রথম শ্রেণী
যে ব্যক্তি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তওবার ওপর অটল থাকেন। গুনাহের স্খলন ঘটে না এবং যেসব ক্ষেত্রে কোনো মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকে না এমন সব জায়গা ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সচেতনভাবে ওই গুনাহ করার ইচ্ছা পোষণ করেন না। এটা ধারাবাহিক ও নিয়মিত তওবা। যারা এভাবে তওবা করে তারা সেই মানুষদের অন্তর্ভুক্ত যারা সব সময় নেক আমলের চেষ্টা করেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে প্রশান্ত আত্মা, তুমি তোমারা পালনকর্তার নিকট সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে ফিরে যাও। এরপর আমার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো। ( সূরা ফজর, আয়াত, ৩০)
২য় শ্রেণী
এমন তওবাকারী যে তার তওবার ক্ষেত্রে আন্তরিক ও কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। কিন্তু মাঝে মাঝে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিস্থিতির কারণে গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। যখনি সে গুনাহে জড়িয়ে পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে নিজের মনকে তিরষ্কার করে, ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়।
এই ধরনের তওবাকারীর অন্তর হলো তিরষ্কারকারী বা সমালোচক আত্মা। কারণ, এমন ব্যক্তি সবসময় নিজেকে ভুলের জন্য তিরষ্কার করে। এই ধরনের তওবাকারীর জন্যও আল্লাহ তায়ালা পক্ষ থেকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
বর্ণিত হয়েছে, যারা বড় বড় গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে, ছোট খাটো অপরাধ করলেও নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার ক্ষমা সুদুর বিস্তৃত। (সূরা আন নাজম, আয়াত, ৩২)
৩য় শ্রেণী
যে ব্যক্তি তওবা করে এবং তওবার ওপর অটল থাকতে চায়, তবে মাঝে মাঝে তীব্র আবেগ, নফসের প্ররোচনা বা লালসার শিকার হয়ে গুনাহ করে ফেলে। কিন্তু এমন ব্যক্তি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার বিধান মেনে চলেন এবং মোটামোটি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকেন, থাকার চেষ্টা করেন। তবে এমন ব্যক্তিকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহীতা করতে হবে। বর্ণিত হয়েছে,
‘আশা করা যায় আল্লাহ তাদের ওপর ক্ষমাশীল হবেন। ( সূরা তাওবা, আয়াত, ১০২)
৪র্থ শ্রেণী
এমন ব্যক্তি যে একবার তওবা করে কিন্তু আসক্তির কারণে আবারো গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। এরপর তার মাঝে গুনাহের জন্য অনুশোচনাবোধ জাগে না এবং সে পুনরায় তওবাও করে না। এই ধরনের মানুষ এমন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত যারা গুনাহের ভেতর ডুবে থাকে। তাদের অন্তর নিয়মিত তাদেরকে গুনাহের দিকে টেনে নিয়ে যায়। এভাবে তাদের মৃত্যু কঠিন কোনো পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।
এমন ব্যক্তি যদি আল্লাহ তায়ালা ওপর ঈমান নিয়ে মারা যায়, তাহলে নির্ধারিত সময়ের শাস্তির পর আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু এমন ক্ষমার আশায় পাপে জড়িয়ে থাকা মোটেও যৌক্তিক নয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘এরপর আমি আমার বান্দাদের মাঝে মনোনীতদেরকে কিতাব দান করেছি। তাদের কেউ নিজেদের প্রতি জুলুমকারী, কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী, আবার কেউ কেউ কল্যাণের পথে অগ্রগামী। এটাই মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। ( সূরা ফাতির, আয়াত, ৩২)
ইমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যারা ছোট গুনাহ করে তারা জালেম। যারা দুনিয়া ও আখেরাতের প্রাপ্য মিটিয়ে দেয় তারা মধ্যপন্থী। আর যারা নেক কাজের পিছনে দৌঁড়ায় তারা সবার থেকে এগিয়ে।
এজন্য সবসময় তওবা করা উচিত, যেন জালেমদের অন্তর্ভু্ক্ত হয়ে না পড়ি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা এমন কাজ থেকে তওবা করে না তারাই জালেম। (সূরা হুজুরাত, আয়াত, ১১)
মুজাহিদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, যারা সকাল সন্ধ্যা তওবা করে না তারাই জালেম। কারণ, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম একেবারে নিষ্পাপ ছিলেন। কিন্তু এরপরও তিনি প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার তাওবা ও ইস্তিগফার করতেন।
এক হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।’ (বুখারি, হাদিস, ৬৩০৭)
এজন্য বেশি বেশি তওবা করা উচিত। এবং তওবা করার সময় ভেবে দেখা উচিত যে, আমি তওবাকারীদের কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।