এক দশক ধরে শিমসহ নানা সবজি চাষ করছেন হরিদাস মণ্ডল। তাঁর বাড়ি মাগুরা সদরের লক্ষ্মীকান্দর গ্রামে। এবার দুই বিঘা জমিতে করেছেন শিমের চাষ। উৎপাদন খরচ বাদে চলতি মৌসুমে দেড় লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছেন। শিমের জন্য লক্ষ্মীকান্দর গ্রামের সুখ্যাতি রয়েছে। প্রক্রিয়াজাত করে এখান থেকে শিম যাচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে।
শুক্রবার গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ ছেয়ে আছে সবুজ পাতায়। বেগুনি ফুলের আড়ালে নানা রঙের শিম ঝুলছে। অনেক কিষান-কিষানি শিম তোলায় ব্যস্ত। আশুতোষ মণ্ডল, কার্তিক মণ্ডল, বন্দনা মণ্ডলসহ কয়েকজন জানান, এ এলাকার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শিমগাছের পরিচর্যা থেকে শুরু করে ঘরে তোলা ও বাজারজাতকরণে বেশি ভূমিকা রাখেন নারীরা। মৌসুমের শুরু থেকেই দিনভর ব্যস্ত থাকতে হয়। শিম তোলার পর বাড়িতে আনা, বাছাই করা ও প্রক্রিয়াজাত করা সব কাজই হয় নারীর নিপুণ হাতে। পুরুষ শুধুই সহযোগী তাদের। বাজারে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য প্রধান ভূমিকা তাদের।
স্থানীয় বাজার থেকে শিম কিনে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন পাইকাররা। পরে এসব শিম মোড়কজাত হয়ে রপ্তানি হয় সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে। এতে ভালো লাভ হয় বলে জানান রামনগরের ব্যবসায়ী আতিয়ার রহমান। এ ব্যবসায় আরও জড়িত মাগুরা একতা কাঁচাবাজারের আড়তদার গৌরাঙ্গ বিশ্বাস ও বিপুল বিশ্বাস। তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে লক্ষ্মীকান্দরের শিম। গুণগত মানের কারণেই এখান থেকে শিম ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন, যা বিদেশে পাঠানো হয়।
লক্ষ্মীকান্দরের শিমের গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মাগুরা সদরের কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, এখানকার শিম প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি হচ্ছে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ নানা দেশে। দেশ ও দেশের বাইরে এখানের শিমের ব্যাপক চাহিদা। এ গ্রামের চাষিরা জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেন। ফলে উৎপাদিত শিম নিরাপদ। তারা যেকোনো বিষয়ে কৃষককে পরামর্শ ও সহায়তা করেন বলেও জানান।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার ২২০ হেক্টর জমিতে শিম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হেক্টর জমিই পড়েছে লক্ষ্মীকান্দর গ্রামে। কর্মকর্তারা জানান, শিম চাষের জন্য দোআঁশ জাতের ভালো মাটি প্রয়োজন। এ গ্রামের মাটির মান গুণগতভাবে ভালো হওয়ায় কৃষকরা ভালো ফলন পাচ্ছেন। এ ছাড়া চাষিরা জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করেন। ফলে এখানে উৎপাদিত শিম সম্পূর্ণ নিরাপদ।
এ গ্রামে চটকা, রহিম-রূপবান, জামাইকলি, বাগনলিসহ নানা জাতের শিম চাষ হয় । পৌষ ও মাঘ মাস শিম তোলার ভরা মৌসুম। তবে ফাল্গুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফলন ওঠে। চার-পাঁচ মাসের মধ্যে কৃষকের গাঁটে মোটা অঙ্কের টাকার জোগান দেয় শিম। ওই টাকা অন্য ফসল চাষে কাজে লাগে।
এসব কারণে লক্ষ্মীকান্দরের কৃষকের কাছে শিম প্রধান অর্থকরী ফসল বলে জানান হরিদাস মণ্ডল। তিনি বলেন, এ বছরের আবহাওয়া ভালো। ফলে শিমের ভালো ফলন হয়েছে। এখন প্রতি কেজির দাম পাচ্ছেন ৪০ টাকা। মৌসুমের শুরুতে ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন।