তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে আবাদ করা শিম গাছের ফুল ঝরে পড়েছে। এতে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। প্রতি বছর এ সময়ে ফলন বাজারে এলেও ফুল ঝরে যাওয়ায় এখনো ফলন আসছে না। ফলন বিপর্যয় হলে লোকসানে পড়তে পারেন তারা।
উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের নিজতালুক গ্রামের কৃষক আবু জাফর বলেন, ‘এ বছর প্রায় ৬০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। রোপণ থেকে এ পর্যন্ত অনেক পরিশ্রম করেছি। ফুলও এসেছে ভালো। তবে কুয়াশার কারণে গাছের ফুল ঝরে গেছে। ফলন আসছে না ঠিকমতো। এভাবে চলতে থাকলে লোকসানে পড়তে হবে। প্রতি বছর এ সময়ে অনেক টাকার শিম বাজারে বিক্রি করতাম।’
দুর্গাপুর ইউনিয়নের রাঘবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘শুধু শিম নয়, ঘন কুয়াশার কারণে সব ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এবার ৩৫ শতক জমিতে শিম চাষ করেছি। এখনো এক কেজি শিম বাজারে নিতে পারিনি। কুয়াশা ও ছত্রাকের কারণে ফুল ঝরে যাচ্ছে এবং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা বন্ধ হলে হয়তো কিছু ফলন হবে।’
মিরসরাই পৌর সদরে বাজার করতে আসা নুরুল হাসান বলেন, ‘এখন পুরো শিমের মৌসুম। প্রতি বছর এ সময়ে শিমের দাম থাকে ৩০ টাকার নিচে। অথচ এ সময়ে এবার শিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকার উপরে।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘মিরসরাই এলাকা শিম চাষের জন্য উর্বর। এবার ৬৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত ঘন কুয়াশার কারণে শিমের ফুল ঝরে যাচ্ছে। শুধু শিম নয়, কুয়াশার কারণে প্রায় সব ধরনের ফসলে ফলন কিছুটা কম হচ্ছে। তারপরও আমরা সমস্যা সমাধানে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার দুই পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়নে প্রায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মধ্যে সীতাকুন্ড উপজেলার পরেই শিম চাষের জন্য মিরসরাই বিখ্যাত। মিরসরাই থেকে সারাদেশে শিম সরবরাহ করা হয়। শিম চাষে খরচ কম লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকেরাও আগ্রহী হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি শিম চাষ হয় উপজেলার খৈয়াছড়া ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাবছর যেসব জমি অনাবাদি পড়ে থাকে এবং ফলনের অনুপোযোগী, সেসব জমিতেও শিম চাষ করছেন কৃষকেরা। এছাড়া যেসব জমিতে বর্ষা মৌসুমে ১-২ ফুট পানি থাকে এমন জমির পাশ থেকে মাটি তুলে সারিবদ্ধভাবে ঢিবি তৈরি করে শিম চাষ করা হয়। ঢিবি থেকে সারির দূরত্ব সাড়ে ৪ থেকে ৬ ফুট। প্রত্যেক ঢিবিতে আলাদা করে খুঁটি দেওয়া হয়। জমি ছাড়াও পাহাড়, গ্রামীণ সড়কের দু’ধার, জমির আইল, পুকুর পাড়, বাড়ির আঙিনা, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশে প্রচুর শিম চাষ হয়েছে।