সৃষ্টির ভাবনা আর এক দশকের পথচলা নিয়ে এ কথাগুলো বলে গেলেন নন্দিত নৃত্যশিল্পী ও নির্দেশক পূজা সেনগুপ্ত। আগামী ৩১ জানুয়ারি তুরঙ্গমী রেপার্টরি ডান্স থিয়েটার প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। তাই পূজার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, পেছন ফিরে তাকালে এই দীর্ঘ সফরটা কীভাবে মনের পর্দায় ধরা দেয়?
‘জীবনকে যে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি, সেটাই আমার কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে চেয়েছি। শিল্পের মান নিয়ে কখনও আপস করিনি। হয়তো সে কারণেই দর্শক-সমালোচকরা বলেন, আমি স্রোতের বিপরীতে চলা একজন। এমনকি আমি যে ভাবনা নিয়ে ডকুমেন্টারি ড্রামা থিয়েটার প্রযোজনা করছি, তা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ– এমন কথাও বলেছিলেন অনেকে। কিন্তু আমি জানি, সৃষ্টিতে কষ্ট থাকবে, ঝুঁকি থাকবে– এটাই স্বাভাবিক। তাই এ নিয়ে আলাদা করে ভাবিনি। প্রতিটি সৃষ্টিকে ভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে গেছি। এটা সত্যি, সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও কোনো কিছু শতভাগ পরিপূর্ণতা পায় না। সৃষ্টিকে যতই নিখুঁত করে তোলার চেষ্টা করি না কেন, কিছু খুঁত ধরা পড়েই যায়। তা দেখে বুঝতে পারি, শত কাজের পরও শিল্পীর তৃপ্তি নেই। হয়তো সে কারণেই শিল্পীরা আমৃত্যু সৃষ্টির নেশায় ডুবে থাকেন। আমিও আছি। আর এভাবেই কখনও যে তুরঙ্গমী রেপার্টরি ডান্স থিয়েটারের সঙ্গে পথচলার এক দশক পূর্ণ হতে চলেছে।’
পূজা বলেন, ‘স্বপ্নের মতোই মনে হয়। অবাক লাগে এই ভেবে যে, এতটা সময় কীভাবে যে চলে গেল। পেছনে ফিরে তাকালে সৃষ্টির নেশায় মেতে ওঠার দৃশ্যগুলোয় বারবার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। আমি যা হতে চেয়েছি, সেটাই হয়েছি। কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করার যে ইচ্ছা, সেটাও অনেকটাই পূরণ হয়েছে। তারপরও মাঝে মধ্যে মনে হয়, স্বপ্নের পরিধিটা আরও বড় হলে ভালো হতো। যদিও স্বপ্ন রচনার সময় ও সুযোগ এখনও ফুরিয়ে যায়নি। তাই আগামী সময়টা আরও বড় করে দেখানোর চেষ্টা করে যাব; যা দেশীয় শিল্পী-সংস্কৃতিতে এক উদাহরণ হয়ে থাকবে। কাজটা করতে চাই আগামী প্রজন্মের হাত ধরে। যারা দেশকে ভালোবাসে এবং দেশে থেকেই কিছু করে দেখাতে চায়, তাদের নিয়ে।’
পূজার এ কথায় চাওয়া-পাওয়া ও লক্ষ্য স্পষ্ট। তাই যখন আমরা দেখি, পূজা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ‘নয়নতারা’ নামের নাচের ক্লাস চালু করছে, তখন অবাক হই না। বরং তাঁর পক্ষেই এমন কিছু করা সম্ভব বলেই মেনে নিই। ‘ওয়াটারনেস’, ‘অদম্য’, ‘হো চি মিন’-এর মতো ব্যতিক্রমী সৃষ্টি ও প্রযোজনা যার পক্ষে সম্ভব, তিনি নতুন প্রজন্মের হাত ধরে আরও ভিন্ন ধরনের আয়োজন করতে পারবেন– সে কথাও এখন অনেকেই বিশ্বাস করেন। পথচলার দ্বিতীয় দশকে পা রেখে পূজাও তারই আভাস দিয়ে রেখেছেন। এখন শুধু সেসব সৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পালা।