আজ শুক্রবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে রাতের বেলায় আকাশ থেকে ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। দিনেও সে কুয়াশার রেশ কাটেনি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উত্তর দিক থেকে আসছে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। ফলে হাড় কাঁপানো শীতে জীবনযাত্রা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দরিদ্র, ছিন্নমূল, ভাসমান ও স্বল্প আয়ের মানুষ।
সকাল আর সন্ধ্যায় হালকা কুয়াশা, দুপুরে কড়া রোদ, কখনো একটু-আধটু হিমেল হাওয়া- এই ছিল পৌষের শুরুর চিত্র। কিন্তু শেষ দিকে এসে বাংলা মাসটি যেন হাজির আপন বৈশিষ্ট্যে। ভোর থেকেই চারদিক ধুসর ঘন কুয়াশায়। বেলা বাড়লেও শীতল হাওয়ার দাপটে যেন তেজহীন সূর্য। তাপমাত্রার পারদ খুব বেশি নিচে না নামলেও উত্তরী হাওয়া আক্ষরিক অর্থেই কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে।
শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে হাসপাতালে। ঘন কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। আলুর খেতে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগ। এমন পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃষ্টির পূর্বাভাসে আলু চাষিরা পড়েছেন দুঃশ্চিন্তায়। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগও ব্যাহত হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল কিশোরগঞ্জ, পাবনা, দিনাজপুর ও চুয়াডাঙ্গায় বয়ে গেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলী ও চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল নিকলীতেই ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো রাজধানী ঢাকাতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমেছে। গতকাল ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকলেও স্বাভাবিকের চেয়ে নগরীতে যান চলাচল ছিল কম। খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘরে ছেড়ে বের হয়নি মানুষ।
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলেও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে কেন এত শীত পড়ছে- এর কারণ ব্যাখ্যা করেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তাঁর মতে, গত এক সপ্তাহ থেকে প্রায় প্রতিদিন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিলো কিশোরগঞ্জ, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জের মধ্যবর্তী উপজেলাগুলো।
দিনে সর্বোচ্চ এক থেকে তিন ঘণ্টা সূর্যের আলো দেখা গেছে; তাও আবার দুপুর ২টার পর। ফলে এসব উপজেলার পরিবেশ সারাদিন সূর্যের আলোয় যে পরিমাণ গরম হয়, তার চেয়ে বেশি পরিমান তাপবিকীরণ হয় দিনের অবশিষ্ট সময় ও রাতে। ফলে এই ৩টি জেলার মধ্যবর্তী স্থানে আজ শনিবারও সর্বনিম্ন তপমাত্রা রেকর্ড হতে পারে।
আবহাওবিদরা বলছেন, তাপমাত্রা যা রেকর্ড হচ্ছে তার চেয়ে ১-২ ডিগ্রি কম অনুভব হচ্ছে। তিন কারণে এই পরিস্থিতি জানিয়ে আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘প্রথমত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। দ্বিতীয়ত দিনভর ঘন কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো কম ছিল এবং তৃতীয়ত মাঘের প্রাক্কালে উত্তরী হাওয়ার বেগ রয়েছে তুলনামূলক বেশি। এসব কারণে শীতের অনুভূতি সবখানে বেড়েছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, ‘আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে শীত কমতে শুরু করবে। তবে আবার মঙ্গলবার থেকে মেঘ দেখা দিতে পারে। এতে কোথাও কোথাও শীতের অনুভূতি আবার বাড়বে। শীতের তীব্রতা কমলেও ঘন কুয়াশা খুব তাড়াতাড়ি কমবে না। আগামী তিনদিন কুয়াশা এমন থাকতে পারে। বৃহস্পতিবার থেকে দেশের কোনো কোনো স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাতে শীত বাড়বে।’