একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা মানুষের বেঁচে থাকার আনন্দ কেড়ে নেয়। একাকি মানুষেরা স্বভাবতই তার আশপাশে কাউকে পান না বলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। আর মানসিক অস্থিরতার দরুন তারা আত্মহত্যার মতো পথও বেছে নেন। বর্তমান বিশ্বে মানুষের মধ্যে একাকিত্ব অনেক বেড়েছে।
করোনা মহামারিতে এ সমস্যা আরও বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী করা এক সমীক্ষা অনুসারে, বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক একাকীত্বের সঙ্গে বসবাস করছেন। যার মধ্যে দেশের দিক দিয়ে ব্রাজিল এগিয়ে আছে।
ব্রাজিলের ৫০ শতাংশ উত্তরদাতা সমীক্ষায় জানান যে, তারা প্রায়ই কিংবা সব সময় একাকী বোধ করেন। অন্যদিকে তুরস্ক, ভারত ও সৌদি আরবে ৪৩-৪৬ শতাংশ উত্তরদাতারা জানান তারাও প্রায়ই একাকিত্ব অনুভব করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোভিড-১৯ মহামারিতে হঠাৎ করেই সারা বিশ্বের মানুষকে তাদের সামাজিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।
এ কারণেই একাকিত্ব বেড়েছে অনেকের মধ্যেই। বিশেষ করে একা বসবাসকারী ব্যক্তি বেকার ও তাক্ষম মানুষের মানসিক অবস্থায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে করোনা মহামারিতে।
জি ৭ দেশগুলোতে ২০২১ সালে পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, মহামারি চলাকালীন প্রতি ১০ জনের মধ্যে অন্তত ৭ জন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি অনুভব করেছেন।
একাকিত্বের সঙ্গে লড়াই করবেন ও ভালো থাকবেন। বেশিরভাগ মানুষই একাকিত্বের কাছে হেরে যান। তাই নিজেকে ভালো রাখতে নিজেই এগিয়ে আসুন।
১. একাকী ব্যক্তিরা সব সময় নিজের সঙ্গে সময় কাটাতেই ভালোবাসেন। পরিবার কিংবা প্রিয়জনের কাছ থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন থাকায় তারা মনের কষ্টে তান্যদেরকে এড়িয়ে চলেন। এমনটি করবেন না। নিজেকে সবার সামনে মেলে ধরুন। লুকিয়ে থাকবেন না ঘরের কোণে।
২. সময় কাটানোর জন্য ও অন্যের ভালো করতে চাইলে একজন সেচ্ছাসেবক হিসেবে নিজেকে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত করুন।
দেখবেন নিঃসঙ্গতা পালিয়ে যাবে। সমাজ, মানুষ ও অবহেলিতদের জন্য কিছু করুন। দেখবেন মনে শান্তি পাবেন ও ভালো থাকবেন।
৩. বয়স্ক ব্যক্তিরাই একাকিত্বে বেশি ভোগেন। বয়সের কাছে হার মেনে যাওয়ার কারণেই তারা নিঃসঙ্গ বোধ করেন। এ সময় চাইলে পুরোনো কোনো শখ বাস্তবায়ন করতে পারেন। বয়স কোনো বিষয় নয়, তাই হেরে না গিয়ে নিজের যা ভালো লাগে তা-ই করুন।
৪. বর্তমানে ছোট-বড় সবাই ডিজিটাল টেকনোলজিতে আসক্ত। যা অনেকের জীবনেই খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। ধরুন, একজন ব্যক্তি তার পরিবার নিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন।
যে ব্যক্তি তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বা একাই বাস করেন, তিনি ওই ছবি দেখলে তো কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। তাই ডিজিটাল টেকনোলজি কম ব্যবহার করুন।
৫. কারো যত্ন নেওয়া একাকিত্বের অনুভূতি কমাতে পারে। ভাই ঘরে একটি পোষ্য রাখুন। দেখবেন পোষ্যের যত্ন নিতে নিভে সময় কেটে যাবে আপনার।
৬. একটি অর্থপূর্ণ জীবনের জন্য উদ্দেশ্য ঠিক করা জরুরি। আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। যখনই ভাববেন, জীবনের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে ঠিক তখনই নতুনভাবে জীবন গড়ার বিষয়ে ভাবুন।
৭. খুবই নিঃসঙ্গতা বোধ করলে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চাইলে নতুন বন্ধুও খুঁজে নিতে পারেন।
৮. আপনার একাকিত্ব যদি আত্মহননের পথে নিয়ে যায়, তাহলে দ্রুত থেরাপিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মনোবিদের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে দেখবেন আপনি আবারও বেঁচে থাকার আননদ ফিরে পাবেন।
সূত্র: স্ট্যাটিস্টা/ টাইমস অব ইন্ডিয়া